IQNA

‘গাজায় এক দিনে ৬০০ লাশ দাফন করেছি’

14:20 - November 15, 2023
সংবাদ: 3474653
তেরহান (ইকনা): ৬৩ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি বৃদ্ধ সাদি বারাকা। দীর্ঘকাল ধরে গাজা উপত্যকায় কবর খননের কাজ করছেন। পেশাদার কবর খননকারী হলেও প্রতিদিনের নারী ও শিশুদের বীভৎস দৃশ্য তাঁর খাবার ও ঘুম কেড়ে নিয়েছে। চলমান যুদ্ধের এক দিনেই তিনি ৬০০ মরদেহ দাফন করেছেন। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে রক্তাক্ত জীবনের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।

এখন আমরা বাধ্য হয়ে গণকবর করছি। প্রতিদিন এত বেশিসংখ্যক মরদেহ দাফন করার মতো জায়গা নেই। তা ছাড়া এখন কবরের ওপর দেওয়ার জন্য স্লাবও পাওয়া যাচ্ছে না। গাজার সব কিছুই এখন শেষ হয়ে গেছে।

আজ পর্যন্ত নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধ ঘটতে দেখিনি। এমনকি নাৎসি শাসনামলেও এমন কিছু দেখিনি। শুধু গতকাল (১০ নভেম্বর) আমি প্রায় ছয় শ শহিদের মৃতদেহ দাফন করেছি। অথচ গত পাঁচ বছরে আমি এর চেয়ে বেশি দাফন করেছি।
এমন বর্বরতা আগে কখনো দেখিনি। আমি যাদের দাফন করেছি তাদের বেশির ভাগই ছিল নারী ও শিশু।
২০ ফুটের কবরে ৪৫ মরদেহ
গণকবরের প্রতিটি আকারে প্রায় ৬ মিটার (২০ ফুট)। এতে ৪৫টি মরদহে একসঙ্গে দাফন করা হয়।

সবচেয়ে বড় গণকবরে একসঙ্গে ১৩৭ জনকে সমাহিত করা হয়। এখানে এখন প্রয়োজনীয় কোনো কাঁচামাল নেই। গাজায় কিছুই বাকি নেই। এমনকি পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব তাদের দাফন করা হচ্ছে।
তাই অজ্ঞাতপরিচয়ের মরদেহগুলো অন্যগুলোর মতো দাফন করা হচ্ছে। যুদ্ধের পর মরদেহ শনাক্ত করতে কবর উত্তোলনেরও সম্ভাবনা নেই।
আমি ঘুমাতে পারছি না
প্রতিদিন এত কবর খুঁড়তে গিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এত বিপুলসংখ্যক শিশুর মৃতদেহ দেখে এখন আমি আর ঘুমাতে পারছি না। কোনো খাবার খেতে পারছি না। এই শিশুদের কী অপরাধ? আমরা কোনো সাহায্য ও খাদ্য চাই না। আমরা আবু আম্মারের (প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত) যুগ থেকে শান্তির জন্য চেষ্টা করছি। অথচ নেতানিয়াহু শুধু রক্তপাতের পেছনে ছুটছে।
আমরা সম্মান ও স্বাধীনতার সঙ্গে বাঁচতে চাই। আমরা চাই, আমাদের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হোক। আমি বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো হতে চাই। যাঁরা সাহায্য পাঠাচ্ছেন তাঁদের এ বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত, যেন আমরা নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে বসবাস করতে পারি। ঠিক যেমন অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে হয়।
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ২৪০ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে চার হাজার ৬০০টি শিশু ও তিন হাজার ১১৩ জন নারী রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ৪১ জন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যরাও রয়েছেন। তা ছাড়া গাজা উপত্যকায় বসবাস করা ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে হত্যা বন্ধের দাবি উঠলেও পশ্চিমা নেতাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে হামলা অব্যাহত থাকে।

 

ট্যাগ্সসমূহ: দাফন ، গাজা ، নারী ، লাশ
captcha