IQNA

সোনালি যুগে বাগদাদে তাফসিরচর্চা

0:01 - October 25, 2022
সংবাদ: 3472708
তেহরান (ইকনা): সোনালি সময়ে বাদগাদ শুধু ধন-সম্পদের ঐশ্বর্যশীল ছিল না; বরং তা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায়ও ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নগরী। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে জ্ঞান-পিপাসুরা ছুটে আসত এই নগরীতে। বিশেষত হিজরি দ্বিতীয় শতকে আব্বাসীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সব সময় কোরআন ও তাফসির শাস্ত্রের চর্চায় বাগদাদের আলেম ছিল অগ্রগামী। হিজরি দ্বিতীয় শতক থেকে পঞ্চম শতক পর্যন্ত তাফসির শাস্ত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন বাগদাদের এমন কয়েকজন মনীষীর বর্ণনা দেওয়া হলো।
দ্বিতীয় শতাব্দী : হাফিজ হুশাইম বিন বাশির (রহ.) ছিলেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর প্রথম শিক্ষক। তাঁর রচিত তাফসির বর্ণনা করেছেন আবু হাশিম জিয়াদ বিন আইয়ুব আল-বাগদাদি (রহ.)। তাঁর বাবা ছিলেন একজন বাবুর্চি। তিনি বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক খাবার তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। বাবা চাইতেন তিনিও দক্ষ বাবুর্চি হিসেবে গড়ে উঠুক। কিন্তু জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী ছিলেন। তিনি কাজি আবু শায়বা (রহ.)-এর ছাত্র ছিলেন। কোনো একদিন হাফি হুশাইম (রহ.)-কে অনুপস্থিত দেখে তিনি বাড়ি উপস্থিত হন। এর বাবা আর তাঁকে জ্ঞানচর্চায় বাধা দেননি।
 
হিজরি দ্বিতীয় শতকের অপর একজন প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ, সাত কিরাতে পারদর্শী, আরবি ভাষাবিদ ছিলেন আলী বিন হামজা কাসায়ি (১৮৯ হি.)। তিনি ‘মাআনিল কোরআন’ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ।
 
তৃতীয় শতাব্দী : কিরাত, ফিকহ, ভাষা-সাহিত্যসহ বহু শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন আবু উবাইদ কাসিম বিন সালাম বাগদাদি (রহ.)। ‘গারিবুল কোরআন’, ‘আল-মাজাজ ফিল কোরআন’ ও ‘মাআনিল কোরআন’ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বহু গ্রন্থপ্রণেতা এই আলেমের প্রসিদ্ধ রচনা। তিনি তাঁর রচনায় কোরআন-সুন্নাহর পাশাপাশি সাহাবি ও তাবেয়িদের মতামত একত্র করেছেন।
 
হিজরি তৃতীয় শতকে কবি ও সাহিত্যিক ইবরাহিম বিন ইয়াহইয়া ইয়াজেদি (রহ.) ‘মাসাদিরুল কোরআন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম ও ইমাম নাসায়ি (রহ.)-এর শিক্ষক সুরাইজ বিন ইউনুস (রহ.) ‘আত-তাফসির’, ‘আন-নাসিখ ওয়াল মানসুখ’ ও ‘আল কিরায়াত’ নামে তিনটি পৃথক গ্রন্থ রচনা করেন। এ ছাড়া ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) ‘আত-তাফসির’, ‘আল-মুকাদ্দাম ওয়াল মুয়াখখার ফি কিতাবিল্লাহ’, ‘জাওয়াবাতুল কোরআন’ ও ‘আন-নাসিখ ওয়াল মানসুখ’ রচনা করেন। আবদুল্লাহ বিন মুসলিম (রহ.) ‘মুশকিলুল কোরআন’ ও ‘গারিবুল কোরআন’, দাউদ বিন আলী জাহেরি (রহ.) ‘নাসিখুল কোরআন ও মানসুখুহু’, হাফিজ ইসমাইল বিন ইসহাক জুহদামি (রহ.) ‘আহকামুল কোরআন’ ও ‘মাআনিল কোরআন ও ইরাবুহু’ রচনা করেন। এই শতকের শেষ মুফাসসির ও প্রসিদ্ধ সুফি জুনাইদ বিন মুহাম্মদ বাগদাদি (রহ.) রচনা করেন ‘আমসালুল কোরআন’।
 
চতুর্থ শতাব্দী : এই যুগে কোরআনের নির্বাচিত অংশের তাফসির রচনা শুরু হয়। যেমন প্রখ্যাত সুফি হুসাইন বিন মানসুর (রহ.)—যিনি মানসুর হাল্লাজ নামে পরিচিত, তিনি ‘তাফসিরু সুরাতি কুল হুলাল্লাহু আহাদ’ রচনা করেন। মুহাম্মদ বিন খালাফ (রহ.) ‘আল-হাবি ফি উলুমিল কোরআন’ নামে ২৭ খণ্ডের বৃহৎ এক তাফসির রচনা করেন। ইমাম তাবারি (রহ.) ‘জামিউল বয়ান আন উজুহি তাবিলে আয়িল কোরআন’ অনবদ্য তাফসির গ্রন্থ রচনা করেন। তাফসির শাস্ত্রে বিস্ময়কর মেধা ও প্রতিভার অধিকারী ছিলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম, যিনি ইবনুল আম্বারি নামে পরিচিত। তিনি কোরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ তিন লাখ কবিতার পঙিক্ত মুখস্থ করেন। এ ছাড়া ১২০টি কোরআনের তাফসির সনদসহ মুখস্থ করেন। তিনি ‘আল-মুশকিল ফি মাআনিল কোরআন’ নামে ৫০ হাজার পৃষ্ঠাবিশিষ্ট একটি গ্রন্থ রচনা করেন। কাজি আহমদ বিন কামিল (রহ.) লেখেন ‘মুজাঝুত তাবিল আন মুজিঝুত তানঝিল’ এবং ইমাম জাজ্জাস (রহ.) ‘আহকাতুল কোরআন’ রচনা করেন।
 
পঞ্চম শতাব্দী : এই শতাব্দীতে কোরআনের ওপর আরো বিশদ গবেষণা শুরু হয়। যেমন মুহাম্মদ বিন হুসাইন (রহ.) ‘হাকায়িকুত তাবিল ফি মুতাশাবিহিত তানজিল’ ও ‘তালখিসুল বয়ান ফি মাজাঝাতিল কোরআন’ রচনা করেন। আলী বিন হুসাইন ‘গুরারুল ফাওয়াদি ওয়া দুরারুল কালায়িদ’ এবং আবু বকর ইবনুল আরাবি (রহ.) ‘ইয়াকুতুত তানজিল ফি তাফসিরিত তানজিল’ ও ‘আনওয়ারুল ফজর ফি তাফসিরিল কোরআন’ রচনা করেন।
captcha