IQNA

ইমাম হাদী ( আ: ) -এর কিছু অমিয় বাণী

17:10 - July 16, 2022
সংবাদ: 3472136
তেহরান (ইকনা): ২১২ হিজরী সালের ১৫ যিল হজ্জ পবিত্র মদীনা নগরীর পার্শ্ববর্তী সারিয়া ( صریا ) নামক স্থানে মহানবীর (সা) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ) বারো মাসূম ইমামের দশম মাসূম ইমাম হযরত আলী ইবনে মুহাম্মাদ আননাক্বী আল হাদীর (আ) শুভ জন্ম গ্রহণ করেন।  তাঁর কুনিয়াহ্ ( ডাক নাম ) আবুল হাসান আস সালিস ( তৃতীয় আবুল হাসান ) । তাঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ লকব (উপাধি) নাকী( পবিত্র , পরিশুদ্ধ ) ও হাদী ( পথপ্রদর্শক)। তিনি ২২০ হিজরী সালে পিতার শাহাদাতের পর মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমাম হন । তাঁর ইমামত কাল ছিল ৩৩ বছর । ইমাম হাদীর (আ) এই দীর্ঘ ইমামত কালে ছয় জন আব্বাসীয় খলীফা রাজত্ব করে : 

    ২১২ হিজরী সালের ১৫ যিল হজ্জ পবিত্র মদীনা নগরীর পার্শ্ববর্তী সারিয়া ( صریا ) নামক স্থানে মহানবীর (সা) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ) বারো মাসূম ইমামের দশম মাসূম ইমাম হযরত আলী ইবনে মুহাম্মাদ আননাক্বী আল হাদীর (আ) শুভ জন্ম গ্রহণ করেন।  তাঁর কুনিয়াহ্ ( ডাক নাম ) আবুল হাসান আস সালিস ( তৃতীয় আবুল হাসান ) । তাঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ লকব (উপাধি) নাকী( পবিত্র , পরিশুদ্ধ ) ও হাদী ( পথপ্রদর্শক)। তিনি ২২০ হিজরী সালে পিতার শাহাদাতের পর মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমাম হন । তাঁর ইমামত কাল ছিল ৩৩ বছর । ইমাম হাদীর (আ) এই দীর্ঘ ইমামত কালে ছয় জন আব্বাসীয় খলীফা রাজত্ব করে : 
 
 
১. মু'তাসিম ( খলীফা মামূনের ভাই ২১৭-২২৭ হি.)
২. ওয়াসিক (খলীফা মু'তাসিমের পুত্র ২২৭-২৩২ হি.)
৩. মুতাওয়াক্কিল ( ওয়াসিকের ভাই ২৩২-২৪৮ হি. )
৪. মুনতাসির ( মুতাওয়াক্কিলের পুত্র ৬ মাস )
৫. মুস্তাঈন্ ( মুনতাসিরের পিতৃব্য পুত্র ২৪৮- ২৫২ হি.)
৬. মু'তাযয ( মুতাওয়াক্কিলের অপর এক পুত্র (২৫২-২৫৫ হি.) 
ইমাম হাদী (আ) খলীফা মু'তাযযের শাসনামলে খলীফার নির্দেশে বিষ প্রয়োগ করলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৫৪ হিজরীর ৩ রজব সামাররা নগরীতে ৪১ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন।
 
     এখন আমরা ইমাম হাদী ( আ : ) - এর কতিপয় অমিয় বাণী নীচে উল্লেখ করছি :
 
     ১. ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :
 
الحِکْمَةُ لَا تَنْجَعُ فِيْ الطِّبَاعِ الْفَاسِدَةِ
 
হিকমত ( প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী ) ফাসিদ ( দুর্নীতি পরায়ণ corrupt ) প্রকৃতির ব্যক্তিদের অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে না ।
 
      ২. ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :
 
الْمُصِیْبَةُ لِلصَّابِرِ وَاحِدَةٌ وَ لِلْجَازِعِ اثْنَانِ
 
ধৈর্যশীল ব্যক্তির ( সাবির ) মুসিবত ( বিপদ ) হচ্ছে একটি এবং ( বিপদাপদে ভীত হয়ে ) অস্থির চিত্ত অধৈর্যশীল ব্যক্তির ( জাযি' جَازِع ) মুসিবত হচ্ছে দুটি ।
 
     ৩.  ইমাম হাদী ( আ: ) বলেন :
 
مَنْ رَضِيَ عَنْ نَفْسِهِ , کَثُرَ السّاخِطُوْنَ عَلَیْهِ .
 
যে ব্যক্তি শুধু নিজের ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকবে তার প্রতি অসন্তুষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি হবে । ( অর্থাৎ আত্মতুষ্ট ব্যক্তির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশকারীদের সংখ্যা অধিক ; এ ধরনের ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না । )
 
    ৪. ইমাম হাদী ( আ :) বলেন :
 
اُذْکُرْ مَصْرَعَکَ بَیْنَ یَدَيْ أَهْلِکَ ,فَلَا طَبِیْبَ یَمْنَعُکَ وَ لَا حَبِیْبَ یَنْفَعُکَ.
 
ঐ সময়ের কথা স্মরণ করো যখন তুমি তোমার পরিবারের মোকাবেলায় দাঁড়াও ( অর্থাৎ স্বীয় পরিবারের সাথে তোমার দ্বন্দ্ব ও ঝগড়া , বিবাদ এবং মতপার্থক্য হতে থাকে অর্থাৎ স্বামী - স্ত্রীর মাঝে সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকে না এবং কার্যত তারা পরস্পর শত্রুতে পরিণত হয় ) ; আর এমতাবস্থায় কোনো চিকিৎসক না তোমার মৃত্যু ঠেকাতে পারবে ، না কোনো বন্ধু তোমার উপকার সাধন করতে পারবে ।
 
   ৫. ইমাম হাদী ( আ: ) বলেন :
 
اَلْمَقَادِیْرُ تُرِیْکَ مَا لَا یَخْطُرُ بِبَالِکَ
 
ভাগ্য তোমাকে এমন সব বিষয় দেখায় যা তুমি কখনো চিন্তাও কর নি এবং ভেবেও দেখ নি ।
 
   ৬. ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :
 
اَلنَّاسُ فِي الدُّنْیَا بِالأَمْوَالِ ، وَ فِيْ الْأٰخِرَةِ بِالْأَعْمَالِ .
 
      এ দুনিয়ায় ( পার্থিব জগতে ) মানুষের ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন  হয় অর্থ ও ধনসম্পদের ভিত্তিতে এবং আখেরাতে  ( পরকাল ) তার ( মানুষ ) ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন হবে তার সৎ কর্মের ভিত্তিতে ।
 
    ৭.ইমাম হাদী ( আ: ) বলেন :
 
اَلْهَزْلُ فَکَاهَةُ السُّفَهَاءِ وَ صَنَاعَةُ الْجُهَّالِ
 
ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হচ্ছে নির্বোধ ও আহমকদের আনন্দ  এবং মুর্খ ও অজ্ঞদের কর্ম ।
 
    ৮.ইমাম হাদী আ বলেন :
 
اَلسَّهْرُ أَلَذُّ لِلْمَنَامِ ، وَ الْجُوْعُ یَزِیْدُ فِيْ طِیْبِ الطَّعَامِ .
 
( ইবাদৎ বন্দেগীর জন্য ) রাত জাগরণ ঘুমকে অধিক মধুর ও সুখকর করে  এবং ক্ষুধা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে ।
 
     ৯. ইমাম হাদী আ বলেন :
 
أَکْثِرْ مِنَ الاِسْتِغْفَارِ وَ الْحَمْدِ ، فَإِنَّکَ تُدْرِکُ بِذٰلِکَ الْخَیْرَ کُلَّهُ .
 
( মহান আল্লাহর কাছে) অধিক অধিক ইস্তিগফার ( ক্ষমা প্রার্থনা ) ও ( তাঁর ) প্রশংসা - স্তুতি ( হামদ )
 
কর ; তাহলে এই ইস্তগফার ও প্রশংসা-স্তুতির মাধ্যমে সকল কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করবে ।
 
   ১০ . ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :
 
لَا تَطْلُبِ الصَّفَا مِمَّنْ کَدَّرْتَ عَلَیْهِ ، وَ لَا الْوَفَاءَ لِمَنْ غَدَرْتَ بِهِ ، وَ لَا النُّصْحَ مِمَّنْ صَرَفْتَ سُوْءَ ظَنِّهِ إِلَیْهِ ، فَإِنَّمَا قَلْبُ غَیْرِکَ کَقَلْبِکَ لَهُ .
 
যার জীবনকে তুমি তিমিরাচ্ছন্ন করেছ তার কাছ থেকে আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা অন্বষণ ( প্রত্যাশা ) করো না ; যার বিরুদ্ধে তুমি ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছ তার কাছ থেকে প্রত্যাশা করো না যে সে তোমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে ; যে ব্যক্তির ব্যাপারে তুমি কুধারণা পোষণ করেছ তার কাছ থেকে তুমি প্রত্যাশা করতে পার না যে সে তোমার কল্যাণ কামী হবে ও তোমাকে হিতোপদেশ দেবে । কারণ  তোমার হৃদয়  অন্যের প্রতি যেমন  অন্যের হৃদয়ও  তোমার প্রতি ঠিক তেমন ।
 
     ১১ . ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :
 
رَاکِبُ الْحَرُوْنِ ،أَسِیْرُ نَفْسِهِ ، وَ الْجَاهِلُ أَسِیْرُ لِسَانِهِ
 
যে ব্যক্তি নিশ্চল ও স্থির বাহনে চড়ে বা আরোহন করে সে স্বীয় নফসের ( প্রবৃত্তি ও রিপু ) কাছে বন্দী হয়ে যায় এবং জাহিল ( অজ্ঞ ) স্বীয় জিহ্বার ( অজ্ঞতা ) কাছে বন্দী থাকে । ( অর্থাৎ
 
নিশ্চল ও স্থির বাহনে চড়া ও আরোহণে মানুষের মনে এক ধরনের গর্ব ও অহংকারের উদ্ভব হয় যা তার (মানুষ ) প্রবৃত্তি ও রিপু প্রসূত । )
 
    মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইমাম আলী আল - হাদী ( আ: ) - এর  প্রজ্ঞাপূর্ণ এ সব অমিয় বাণী আমল ও পালন করার তৌফিক দিন । পবিত্র কুরআন অনুশাসন , মহানবী ( সা: ) এবং তাঁর আহলুল বাইত ( আ: ) - এর শিক্ষা ও সুন্নাহ যদি আমরা ঠিক ভাবে মেনে চলি তাহলে আমরা জীবনের সব ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারব এবং আমাদের জীবন হবে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ।
 
১২. ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :
 
 خَيرٌ مِن الخَيرِ فاعِلُهُ ، و أجمَلُ مِن الجَميلِ قائلُهُ، و أرجَحُ مِن العِلمِ حامِلُهُ .[بحار الأنوار : 78/370/4 .]

ইমাম হাদী (আ) বলেন : ভালো কর্মের চেয়ে উত্তম হচ্ছে ঐ ভালো কাজ সম্পাদনকারী ; সুন্দর বাণী বা কথার চেয়ে উত্তম হচ্ছে ঐ কথা ও বাণীর কথক এবং বিদ্যার চেয়ে উত্তম ও অধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হচ্ছে ঐ বিদ্যার ধারক ও বাহক ( অর্থাৎ জ্ঞানী ) ।
সূত্র : বিহারুল আন্ওয়ার : ৪/ ৩৭০/ ৭৮
 
সূত্র : শেখ আব্বাস কোম্মী প্রণীত নেগহী বে যেন্দেগনীয়ে চাহরদাহ মা'সূম ( আ: ) , পৃ : ৪৪৬-৪৪৮ থেকে সংকলিত ও অনূদিত
 
অনুবাদ : ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

 

captcha