বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: মদিনায় হযরত আলী (আ.)'র স্ত্রী ফাতিমা বিনতে হাজ্জাম তথা উম্মুল বানিনের গর্ভে জন্ম নেয়া এই মহাপুরুষ যে একদিন জগতের আলোয় পরিণত হবেন তার পূর্বাভাস পাওয়া যায় পিতা মাওলা আলীর একটি বক্তব্যে। ওই বক্তব্যে এসেছে: আমার সন্তান আব্বাস শিশু থাকা অবস্থায়ই জ্ঞান রপ্ত করত। কবুতরের ছানা যেভাবে মায়ের কাছ থেকে পানি ও খাদ্য নেয়, তেমনি আব্বাসও আমার কাছ থেকে জ্ঞান রপ্ত করত।
ইমাম হুসাইন (আ.)'র প্রতি আবুল ফজল আব্বাস (আ.)'র ভালবাসা ছিল সুউচ্চ ও সুবিস্তৃত পর্বতমালার মতই অবিচল এবং সাগরের মতই কুল-কিনারাহীন। হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.)'র মহাবরকতময় সান্নিধ্যও ভাই আবুল ফাজলকে উন্নত আত্মার ও মহান চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল।
ভদ্রতা ও আদব-কায়দা রক্ষার দিকেও খুবই সচেতন ছিলেন আবুল ফাজল(আ.)। তিনি ইমাম ভ্রাতৃদ্বয়ের সামনে পরিপূর্ণ আদব রক্ষা করে চলতেন। কখনও অনুমতি ছাড়া তাঁদের পাশে বসতেন না। বর্ণনায় এসেছে, ৩৪ বছরের বরকতময় জীবনে আবুল ফাজল (আ.) কখনও ইমাম হুসাইন (আ.)-কে ভাই বলে সম্বোধন করেননি, বরং তাঁকে 'হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান' ও 'আমার মাওলা বা নেতা' বলে সম্বোধন করতেন। তিনি শৈশব থেকে সব সময়ই মহান ভাইয়ের পাশে থেকেছেন তাঁর সহায়তার জন্য এবং এ পথেই শেষ পর্যন্ত শাহাদত বরণ করেন।
কারবালার ঘটনায় হযরত আবুল ফজল আব্বাস (আ.)'র অশেষ আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও বীরত্ব তাঁকে পরিণত করেছে এই বিপ্লবের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বে এবং খোদায়ী আনুগত্যের অমর প্রতীকে। তিনি ছিলেন কারবালায় ইমামের বাহিনীর অন্যতম প্রধান সেনাপতি ও পতাকাবাহী।
হযরত আব্বাসের ত্যাগ এবং ইমাম হুসাইনের প্রতি তার আনুগত্য সম্ভবত পবিত্র কোরআনের এই আয়াত থেকেই উতসরিত হয়েছে: মদীনাবাসী ও পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের উচিত নয় রাসূলুল্লাহর সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া এবং রাসূলের জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করা। কারণ আল্লাহর রাস্তায় যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা তাদের স্পর্শ করে ও তাদের যেসব পদক্ষেপ কাফেরদের মনে ক্রোধ সৃষ্টি করে এবং শক্রদের পক্ষ থেকে তাদের ওপর যে আঘাত আসে তার প্রত্যেকটি সৎকর্ম হিসেবে গণ্য হয়। আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।
আমরা হযরত আব্বাসের প্রতি এভাবে সালাম দিয়ে থাকি: «أَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَالَغْتَ فِي النَّصِيحَةِ وَ اَدَّیْتَ الامانَةَ؛ হে হযরত আব্বাস! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি অন্যের ভাল চাওয়ার অর্থকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং আমানতদার ছিলেন।
সূরা হাশরের ৯ নং আয়াতটির মর্মার্থও হযরত আব্বাসের মধ্যে পরিপূর্ণ অর্থ খুঁজে পেয়েছে: যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদিনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। শাবিস্তান